সাহিত্য মন্ত্রণালয় চাই প্রসঙ্গেঃ কখনো কখনো উন্মাদ গাছে ধরে
-মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী
সনেট কবি আব্দুর রাজ্জাক ভাই এর কবিতার অডিও ক্লিপ ‘সাহিত্য মন্ত্রণালয় চাই’ শুনে শুনে সারা জাতির মনোযোগ আকর্ষণ হওয়ায় যখন দেশ বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলা ভাষাভাষী কবি লেখক কলামিস্ট গল্পকার ঔপন্যাসিক ও সমাজ চিন্তক মহল এবং সমাজ সচেতন নাগরিকবৃন্দ যখন সুর তুলেছেন সাহিত্য মন্ত্রণালয় দাবীতে জাতীয় ঐক্য গঠনের। ঠিক সেই মুহূর্তে দু’চারজন কবি লেখক সুর পাল্টিয়ে দাবী করছেন সাহিত্য অধিদপ্তর চাই!
তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, সরকার গরীর হয়ে যাবে একটা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করলে। কেউ কেউ আবার বলছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তো রয়েছে। তাহলে সাহিত্য মন্ত্রণালয় কেন? কেউ কেউ আবার এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার অহেতুক যুক্তি-তর্কে মেতে ওঠেছেন।
যেন যুদ্ধের ময়দানের সেনাপতি।
একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সুস্থ জ্ঞান বিবেকসম্পন্ন এবং সমাজ পরিবর্তনে যেকোন নাগরিকের লেখ লেখি করা, কবিতা চর্চা করা, সাহিত্য চর্চা করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। লেখালেখি করতে, কবিতা পাঠের আসর করতে, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা সভা করতে কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে কোন খোলা ময়দানে সাংস্কৃতিক সম্মেলন করতে হলে পুলিশকে অবহিত করতে হয়। নিরাপত্তা ও অবহিতকরন করে লিখিত আবেদন করে অনুমতি নিতে হয়। পুলিশের অনুমতি না নিয়ে কোন খোলা ময়দানে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করলে, তাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেলে আয়োজনকারীকে দায়িত্ব নিতে হয়। সেখানে রাস্ট্রকে দায়ী করা যায় না।
পৃথিবীর অনেক দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য একটি
মন্ত্রণালয়-ই সব দায়দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে সব বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয়। ক্রীড়া সংস্কৃতি ও ধর্ম একই মন্ত্রণালয়ভুক্ত রয়েছে অনেক দেশে। আমাদের দেশে রয়েছে আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয়। শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় থাকা সত্ত্বেও রয়েছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সারা দেশে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক লোক সাহিত্য চর্চা করেন। কেউ কবিতা চর্চা করেন, কেউ গীতিকবিতা চর্চা করেন, কেউ পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ নিবন্ধ গল্প রম্য রচনা লেখালেখি করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সাহিত্যের কোন শক্তিশালী অবস্থান নেই কোন মন্ত্রণালয়ে।
দেশে শিল্পকলা একাডেমি রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের।
শিল্পী কলাকোশলিরা স্বসম্মানে বিনা ভাড়ায় হল অডিটোরিয়াম বরাদ্দ পান। কিন্তু কোন সাহিত্য সংগঠন অনুষ্ঠান করতে তাদেরকে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
বায়ান্নের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণীয় করে রাখতে এবং স্বাধীনভাবে বাংলাভাষা চর্চা করতেই গঠিত হয় বাংলা একাডেমী। পরে বানান পরিবর্তন করে বাংলা একাডেমি। যেখানে স্বাধীনভাবে বাংলাভাষা চর্চা করার অগ্রাধিকার দেয়ার কথা, সেখানে ও চড়া মূল্যে ভাড়া পরিশোধ করতে হয় সাহিত্য চর্চা করতে।
সারা বছরে ২৫ জন সদস্য নেয়া হয়। দশ জন সরকারি কর্মকর্তা, দশ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পছন্দের মাত্র পাঁচ জন। স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকের কোন অধিকারকে প্রাধান্য দেয়া হয় না সেখানে। তাও আবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ করে রাখা হয়েছে বাংলা একাডেমিকে।
যেহেতু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিনে শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি সহ অসংখ্য সংস্থা রয়েছে, সেখানে বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিনে এটা মেনে নেয়া যায় না। কারণ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা প্রাপ্ত।
বাংলা একাডেমি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্থ হতো, তখন বলা যায় এটা ফুল মিনিস্ট্রি এডুকেশন মিনিস্ট্রির অধিনে। যদি আবার এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের মতো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধিনস্থ হতো তা হলেও মানানসই হতো।
সারা দেশে লক্ষ লক্ষ লেখকদের জন্য একান্ত দরকার
সাহিত্য মন্ত্রণালয় গঠন করে বাংলা একাডেমিকে সাহিত্য মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান করে নেয়া।
বাংলাদেশের কবি লেখক কলামিস্ট সাংবাদিক গল্পকার ঔপন্যাসিক রম্য রচনা লেখক, গ্রন্থালোচক, ইতিহাস লেখক, ভ্রমণ কাহিনী লেখক, শিশুতোষ উপন্যাস লেখক, গীতিকার প্রকাশকদের জন্য একান্ত দরকার বিধেয় আমরা সাহিত্য মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী এমপির সাথে। তিনি বিস্তারিত শুনে বলেছিলেন আপনি (অত্র লেখক) একটা স্মারকলিপি তৈরী করে নিয়ে আসুন আপনার সংগঠনের প্যাডে লিখে। বরাবর সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাধ্যমে আমার নাম (দেওয়ান ফরিদ গাজী এমপি) লিখে দিবেন। আমি স্মারকলিপি তৈরী করে তাঁকে দিয়েছিলাম বটে। কিন্তু তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে শেষে পরলোকগমন করলে জাতির সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তখন।
একটা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে-ই যথেষ্ট। তিনি সংসদে বিল পাস করবেন নাকি মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সেটা একান্ত তাঁর নিজের ব্যাপার।
আমাদের সাথে যারা যারা তখন ছিলেন তারা আরেকটি যুক্তি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, যদি শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট রিট করতে হয়, আপনারা তা-ই করবেন কিন্তু হাল ধরে রাখতে হবে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলেও সত্যকথা, উন্মাদ গাছে ধরে কখনো কখনো। তাই তো অনেকেই বলছেন আমি নাকি একটা উন্মাদ! হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, দেশ ও জাতির জন্য কখনো কখনো উন্মাদ হতে-ই হয়। আর উন্মাদ না হলে কি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে কেটে এ সব অসাধ্য সাধন করতে পারতাম।
আমার উন্মাদনায় যারা যারা পাশে ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চাই। তাদের উপর মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হোক।
বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যে বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাবের বিশেষ বিশেষ অবদানগুলোর মধ্যে অন্যতম নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা, বাসন্তী সাহিত্য উৎসব, বৈশাখী ভ্রাম্যমান সাহিত্য উৎসব, জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন ঐতিহাসিক গৌড়ীয় সাহিত্য সম্মেলন সিলেটে, সিলেট লোকসাহিত্য উৎসব, দূর্ব্বীণ শাহ্ লোক উৎসব, সাহিত্য বিষয়ক কর্মশালা রচনা ও সংগীত বিষয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান।
যারা জ্ঞানী মহাজন তারা বলছেন, এসব অসাধ্য সাধন
জাতির জন্য মহৎ কাজ। যারা এসব সহ্য করতে পারেন না, তারা তো বলবেন-ই এসব মহা উন্মাদ এর কাজ। বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব ঢাকা মহানগর সভাপতি বন্ধুবর সনেট কবি আব্দুর রাজ্জাক তাঁর কালজয়ী সনেট কবিতা ‘সাহিত্য মন্ত্রণালয় চাই’ লেখাটি আবৃত্তিশিল্পী দ্বারা আবৃত্তি করিয়ে ফেইসবুকে অডিও ক্লিপ ও ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করায় সারা দেশের কবি লেখকদেরকে আন্দোলিত করেছে।
সকল কবি লেখকগণ বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি এবং
সম্পাদকগণ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন গাঙচিল মুখপাত্র সাহিত্য সংগঠক কবি খান আখতার হোসেনের নেতৃত্বে, নন্দিত লেখক মেজর পলক রহমান এবং বর্তমান সময়ের সাহসী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠক জাগ্রত ব্যবসায়ী জনতা বাংলাদেশ এর কর্ণধার শিহাব রিফাত আলম রূপমকে দেখছি সাহিত্য মন্ত্রণালয় আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনের ধ্বজাধারী সৈনিক রূপে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিতে।
সুতরাং আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী, আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশে একদিন সাহিত্য মন্ত্রণালয় গঠিত হবে। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, মহান আল্লাহ যেন আমার মতো শত সহস্র সাহিত্য উন্মাদ এই জাতির জন্য সৃষ্টি করে দেন।
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীঃ কবি, চেয়ারম্যান- বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব ও আহবায়ক- সাহিত্য মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন আন্দোলন।
(অনুলিখনঃ স’লিপক)